মুসলমান মানুষজন সময়ে সময়ে তাঁদের সম্পত্তির কিছু অংশ বা পুরোটাই মুসলমান মানুষজনের উন্নতি, তাদের শিক্ষা বা তাদের বিভিন্ন সামাজিক কাজের জন্য, সাহায্যের জন্য এক অছি বা ট্রাস্টের কাছে দিয়ে যান, দিয়ে গেছেন এই সম্পত্তিই হল ওয়াকফ। এই সম্পত্তি দেখাশুনো করার জন্য যেমন ঐ অছি আছে তেমন জেলা বা রাজ্য জুড়ে ওয়াকফ বোর্ড আছে যারা সেই সম্পত্তির ঠিকঠাক দেখভাল হচ্ছে কি না বা যে উদ্দেশ্যে এই জমি, সম্পত্তি দেওয়া হয়েছে তা যথাযথভাবে পালন হচ্ছে কি না তা দেখাশুনো করেন, এবং তা নিয়ে দেশের আইন আছে। দেখাশুনো কি ঠিকঠাক করে হয়? না, বহু অভিযোগ আছে, বহু ক্ষেত্রে ঐ সম্পত্তি হাতিয়ে নেবার অভিযোগ আছে, বিক্রি করে দেবার অভিযোগও আছে, তা নিয়ে ঝুট ঝামেলা আছে আর আইনী লড়াই তো আছেই। এবার সেই আইনে মোদি সরকার কিছু সংশোধন আনতে চান, আর তা নিয়ে এক বড়সড় গোলযোগ বেঁধেছে। সে গোলযোগের স্বাভাবিক আর মূল কারণই হল মুসলমান মানুষজনের কাছে মোদি – শাহ, বিজেপি – আর এস এস এর বিশ্বাসযোগ্যতার বিরাট অভাব, সে বিশ্বাসযোগ্যতা নেই বললেও ভুল বলা হয় না। আসুন একটু সেই গোলমেলে আইন সংশোধন এর বিষয়টাকে বুঝে নিই। ২০২৪ সালের ওয়াকফ সংশোধনী বিলে প্রধান প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলি কী কী? ২০২৪ সালের ওয়াকফ সংশোধনী বিলে কিন্তু খুব মামুলি কোনও সংশোধন নয় বরং যে আইন ছিল তাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলে তিনটি নতুন ধারা যোগ করা হয়েছে: ৩এ, ৩সি, এবং ৩সি২। ধারা ৩এ: এতে বলা হয়েছে যে কেউ শুধুমাত্র তখনই ওয়াকফ তৈরি করতে পারবে যদি সে সম্পত্তির আইনি হেফাজতকারী হয় এবং তার কাছে সম্পত্তি হস্তান্তর বা উৎসর্গ করার অধিকার থাকে। মানে সাধারণ ভাষায় সম্পত্তিটা যেন তার দখলে থাকে আর সেই সম্পত্তি তার বিক্রি বা দান করার অধিকার থাকে। এবার সমস্যা হল ধরুন দিল্লির জামা মসজিদ, যেখানে মূল মোতাওয়াল্লি পরিবার, মানে যারা আদতে দেখরেখ করতো, যাঁদের কাছে বিক্রি করার দান করার অধিকার ছিল, তাঁরা পাকিস্তানে চলে গেছেন বা দিল্লির জোরবাগের মসজিদ, যেটি বাহাদুর শাহ জাফরের মা তৈরি করেছিলেন, সেই পরিবারের আজ আর কেউ বেঁচেই নেই, বা যাঁরা সেই দাবি করছেন তা নিয়ে প্রচুর ডিসপিউট আছে। তাহলে সেই সম্পত্তিগুলো কী হবে? আইন বলছে তাহলে সেই সম্পত্তি সরকারের কাছে চলে যাবে, হ্যাঁ এইখানেই সমস্যার সূত্রপাত। মুসলমান মানুষজন ভাবছেন যে তাঁদের এতদিনের ওয়াকফ সম্পত্তি সরকার নিয়ে নিতে চাইছে।