MENU

Fun & Interesting

প্রশংসিত ডাক্তার দম্পতি জেসন-মেরিন্ডি | ইত্যাদি বান্দরবান পর্ব ২০১৯

Fagun Audio Vision 1,451,643 lượt xem 5 years ago
Video Not Working? Fix It Now

২০১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রচারিত ইত্যাদিতে টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ে স্থাপিত কাইলাকুড়ী হেলথ কেয়ার সেন্টারের ডাক্তার এড্রিক বেকারের ওপর প্রথম প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। ডাক্তার বেকার যেমন ব্যতিক্রমধর্মী তেমনি তার হাসপাতালটিও ব্যতিক্রমধর্মী। গ্রামের সবার কাছে ডাক্তার ভাই হিসেবে যিনি বেশি পরিচিত। টানা ৩২ বছর ধরে ভিনদেশি এই মানুষটি বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন টাঙ্গাইলের মধুপুরগড়ে। আর এ জন্য সেখানে চার একর জায়গাজুড়ে তিনি গড়ে তুলেছিলেন এক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, যার নাম 'কাইলাকুড়ী হেলথ কেয়ার সেন্টার’।

বেকারের জন্ম ১৯৪১ সালে নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে। যুদ্ধকালীন এখানকার মানুষের দুর্ভোগের চিত্র দেখে তিনি ঠিক করেন সম্ভব হলে বাংলাদেশে আসবেন। অবশেষে ১৯৭৯ সালে তিনি বাংলাদেশে আসেন। ভালোবেসে ফেলেন এদেশ-থেকে যান এদেশের মাটির টানে। আস্তে আস্তে শিখে ফেলেন বাংলা ভাষাও। এরপর কেটে গেছে ৩২ বছর।

ডা. এড্রিক বেকার ছিলেন এই এলাকার মানুষের কাছে আশার আলো। তাই গ্রামবাসীর দাবির সঙ্গে একাত্ম হয়ে আমরাও ইত্যাদির মাধ্যমে তাকে নাগরিকত্ব প্রদান করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম এবং ২০১৪ সালের ৫ আগস্ট তিনি নাগরিকত্ব লাভ করেছিলেন। নাগরিকত্ব লাভের পর ২০১৪ সালের ৫ ডিসেম্বর প্রচারিত ইত্যাদিতে তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি ইত্যাদির দর্শকদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ইত্যাদির দর্শকদের মধ্যে অনেক মেডিকেলের ছাত্র আছে। তাদের উদ্দেশে আমি বলতে চাই, আপনারা গ্রামাঞ্চল ভুলে যাবেন না। গরিব মানুষদের ভুলে যাবেন না।’ তার আশা ছিল ভবিষ্যতে এদেশেরই কোনো না কোনো ডাক্তার তার এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের হাল ধরবেন। ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর এই ক্যান্সারেই মৃত্যুবরণ করেন সবার প্রিয় ডাক্তার এড্রিক বেকার। সহকর্মীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনতে চাইলেও ডাক্তার ভাই আসেননি। তিনি জানিয়েছিলেন, তার ইচ্ছে তিনি এখানেই চিকিৎসা নেবেন এবং এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবেন। তার মৃত্যুর পর ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর তাকে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তার শোবার ঘরের বারান্দায় সমাহিত করা হয়। তার মৃত্যুর পর কীভাবে চলছে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র? জানার জন্য দীর্ঘদিন পর আমরা গত ২ নভেম্বর আবারও গিয়েছিলাম মধুপুরের এই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে। অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম ডাক্তার ভাই না থাকলেও পুরো হাসপাতাল চলছে তারই নির্দেশিত পথে। তবে ডাক্তার ভাইয়ের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নাম বদলে এখন রাখা হয়েছে ‘Doctor Baker’s Organisation For Well-being’. নাম বদলালেও বদলায়নি নিয়ম।

ডা. এড্রিক বেকারের মৃত্যুর পর এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নেন আমেরিকার এক হৃদয়বান দম্পতি জেসন-মেরিন্ডি দম্পতি। দুজনই লেখাপড়া করেছেন ইউনিভার্সিটি অব ওকলাহোমায়। ক্যালিফোর্নিয়ার নেটিভিডেড মেডিকেল সেন্টারে একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে দুজনের পরিচয় এবং ২০০৫ সালে পরিণয়। জেসনের এক চাচা ডাকলেস সে সময় ময়মনসিংহের একটি এনজিওতে কাজ করতেন। সেই সূত্রে জেসন বাংলাদেশে আসেন এবং চাচার সঙ্গে কাইলাকুড়ী হাসপাতালও পরিদর্শন করেন। সে সময় জেসন ও তার স্ত্রী মেরিন্ডির ভীষণ ভালো লেগে যায় হাসপাতালটি। দেশে থেকেও নিয়মিত হাসপাতালটির খোঁজখবর নিতেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালে ডাক্তার ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ শুনে জেসন অস্থির হয়ে উঠেন। নিজের প্রশিক্ষণ ও ছেলেমেয়েরা ছোট থাকার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশে আসতে পারেননি। শেষে সবকিছু গুছিয়ে সম্পদ আর সুখের মোহ ত্যাগ করে ২০১৮ সালে পুরো পরিবার নিয়ে আমেরিকা ছেড়ে স্থায়ীভাবে চলে আসেন এই মধুপুরে। জেসন হয়ে উঠেন নুতন ডাক্তার ভাই, আর তার স্ত্রী মেরিন্ডি ডাক্তার দিদি। জেসন-মেরিন্ডি দম্পতি বিদেশের পরিবেশ থেকে এই পরিবেশে এসে যেমন খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। তেমনি তাদের শিশু সন্তানরাও এই পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। এমনকি ইতিমধ্যে তাদের স্থানীয় স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন জেসন দম্পতি। খেলাধুলা করছে গ্রামের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে। খাদ্য তালিকায়ও রয়েছে দেশীয় ফল, বাংলাদেশি খাবার। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ছেলেমেয়েদের স্কুলের জন্য তৈরি করেন মেরিন্ডি। তারপর স্বামী-স্ত্রী দুজন নাস্তা করে বেরিয়ে পড়েন হাসপাতালের উদ্দেশে।

এই ডাক্তার জেসন-মেরিন্ডি দম্পতির ওপর আমরা ইত্যাদির বান্দরবান পর্বে একটি প্রতিবেদন প্রচার করেছিলাম। ইউটিউবে আসার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই এই প্রতিবেদনটি ভার্চুয়াল মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করে। হয়ে যায় ভাইরাল। প্রশংসায় ভাসতে থাকেন জেসন-মেরিন্ডি দম্পতি। সম্পদ ও বিলাসবহুল জীবন ত্যাগ করে, ছোট ছোট সন্তানকে নিয়ে অজোপাড়াগাঁয়ে মাটির ঘরে বসবাস করে বাংলাদেশের এক নিভৃতপল্লীতে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মতো মহৎ কাজ করায় সবাই তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

জেসন-মেরিন্ডি দম্পতি তাদের কাজের জন্য এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কোনো অর্থ নেন না। বরং এড্রিক বেকারের মতো বিদেশে অবস্থানরত তাদের আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য নিয়ে হাসপাতালে দান করেন। হাসপাতাল থেকে শুধু তাদের থাকার জন্য একটি ঘর এবং তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আমরা ডা. জেসনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম ইত্যাদির মঞ্চে। জানতে চেয়েছিলাম পৃথিবীর এত দেশ থাকতে এই কাইলাকুড়ী কেন এলেন? জেসনের উত্তর ছিল, গরিব মানুষের সেবা করতে। এখানকার মানুষগুলো খুব ভালো সহজ-সরল।’ সবশেষে জানতে চেয়েছিলাম, আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? উত্তরে বলেছিলেন, আমরা চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষের সেবা করতে চাই। চিকিৎসা শুধু ব্যবসা নয়, সেবাও। ডাক্তার ভাইয়ের মতো আমরাও চাই গরিব মানুষের উপকারের জন্য কিছু করতে। তাহলেই ডাক্তার ভাইয়ের আত্মা শান্তি পাবে।’

পুরো অনুষ্ঠান: https://youtu.be/_yrIkrvi9Lo

Subscribe to our channel Fagun Audio Vision and watch more shows of Ityadi and creations of Hanif Sanket.

Warning:
This audio-visual element is copyrighted content of Fagun Audio Vision, Dhaka, Bangladesh. Any unauthorized publishing is strongly prohibited.

#Ityadi #Bandarban #ডাক্তারভাই #বান্দরবান #জেসনমেরিন্ডি

Comment