বলখের বাদশাহ হযরত ইব্রাহিম ইবনে আদহাম (রাহঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী - তিনি ইব্রাহিম বলখি নামেও পরিচিত। হযরত ইব্রাহিম ইবনে আদহাম (রহঃ) সুফি দরবেশ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তার পিতা হযরত আদহাম সেই সময়ে একজন বিখ্যাত সুফি দরবেশ ছিলেন। তিনি ৭১৮ খ্রিস্টাব্দে আফগানিস্তানের বলখে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটকাল থেকে দরবেশ পিতা হযরত আদহাম (রহঃ) তাকে ধর্মীয় শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে তোলেন।
তিনি যে সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেই সময় একাধিক বুজুর্গ বিশ্বব্যাপী দ্বীন ইসলাম প্রসার প্রচারে নিয়োজিত ছিলেন। তার পিতা তাকে তার অনিচ্ছার বিরুদ্ধে বলখের প্রদেশের রাজা হিসেবে দায়িত্ব দেন। তিনি সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। কিন্তু কয়েকটি ঘটনা তাকে দুনিয়াবিমুখ করে তোলে। যে কারণে তিনি একটি পর্যায়ে সিংহাসন ত্যাগ করে ফকিরি জীবন বেছে নেন। হযরত ইব্রাহিম ইবনে আদহাম (রহঃ) ছিলেন হযরত ওমর (রাঃ) এর বংশধর। জীবদ্দশায় তিনি ইমাম বাকের (রহঃ) ও ইমাম জাফর সাদেকের (রহঃ) সান্নিধ্য লাভ করেন। তার জীবনীতে দেখা যায়- তিনি প্রতি সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ দিন নফল রোজা রাখতেন।
একদিন তিনি নিজের বিছানায় আরাম করছিলেন। হঠাত্ করে একটি পায়ের আওয়াজ তিনি শুনতে পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কে? উত্তর এলো, আমি আমার হারিয়ে যাওয়া উট তালাশ করছি। তিনি বললেন, তোমার চেয়ে বোকা আর কে হতে পারে যে আমার ছাদে উট তালাশ করছো। ছাদ থেকে উত্তর এলো, সেই ব্যক্তি আমার চাইতেও বোকা, যে রাজ সিংহাসনে বসে আল্লাহকে অনুসন্ধান করছে। এরপর তিনি রাজত্ব পরিত্যাগ করে গৃহত্যাগী হয়ে গেলেন। একাধিক দেশ সফর করার পর তিনি পবিত্র মক্কা ও মদিনায় উপস্থিত হলেন। ওমরা হজ করার পর তিনি সিরিয়ায় চলে এলেন, এখানে এসে তিনি মহান আল্লাহর বাণী প্রচার করা শুরু করলেন। একপর্যায়ে তার স্ত্রী ও একমাত্র পুত্র সন্তানের তিনি সাক্ষাত্ পান। তিনি সিরিয়ায় ৭৮২ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। সেখানেই তার মাজার রয়েছে। হাজার হাজার সুফি দরবেশ ও গবেষকরা এই মহাপুরুষের #মাজার_জিয়ারত করতে যান।
আফগানিস্তানের প্রখ্যাত সুফি সাধকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি। মুসলিম ঐতিহ্য অনুযায়ী, ইব্রাহিম বলখির পরিবার কুফা থেকে এসেছিল। পরে সেখান থেকে বলখিতে (বর্তমানকালে আফগানিস্তান) স্থানান্তরিত হয়েছিল এবং বলখিতেই ইব্রাহিমের জন্ম হয়। অধিকাংশ লেখকের মতে, তার বংশগত উমর ববিন খাত্তাবের বংশের সঙ্গে গিয়ে মিলিত হয়েছে। কিছু মধ্যযুগীয় লেখকরা যেমন ইবনে আসাকির ও মুহাম্মদ আল বুখারি #ইব্রাহিম_বলখির_জীবনী লিপিবদ্ধ করেন।
দীর্ঘ দিনের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে গিয়ে হযরত আদহাম (রহ.) আল্লাহর এক মহান আবিদ ও সাধকে পরিণত হলেন। তার স্ত্রী গুল-ই জান্নাত অত্যন্ত মহীয়সী ও দ্বীনদার। এ দু মহাত্মার দাম্পত্য জীবন সুন্দরভাবে কাটছে। দু’বছর পর গুল-ই জান্নাত অন্তঃসত্ত্বা হলেন। ৭১৮ খ্রি. গুল-ই জান্নাতের ঘর আলোকিত করে হযরত ইব্রাহিম ইবনে আদহাম (রহ.) জন্ম নিলেন।
কিন্তু রাজ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও সাধকের জীবন অতিবাহিত করার জন্য ইব্রাহিম রাজমহলের জীবন পরিত্যাগ করেন। তার সুফি হয়ে উঠার ঘটনা সুফি লোককাহিনীতে একটি জনপ্রিয় কাহিনী। খিদর'র, মাধ্যমে ইব্রাহিম স্রষ্টা থেকে একটি সাবধান বাণী পান এবং তাকে তরবারি ত্যাগ করে সিরিয়ায় সুফি সাধকের জীবন অতিবাহিত করার নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, খিদর তার সম্মুখে দুইবার উপস্থিত হয়েছিল। ৭৫০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে বলখি থেকে স্থানান্তরিত হয়ে তিনি যাযাবরের ন্যায় জীবনযাপন করতে থাকেন এবং প্রায় সময় গাজার দিকে সফর করতেন। অলস ও ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করাকে ইব্রাহিম বলখি ঘৃণা করতেন। তিনি প্রায় সময় শস্য পিষে ববা ফলের বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
আল্লাহর এ মহান অলি নিরুদ্দেশ হওয়ার পর একবার খানায়ে কাবায় পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তাদের মমত্ববোধ হৃদয়ে স্থান পাওয়ার পূর্বেই আওয়াজ এলো, আল্লাহর প্রেমে বিভোর ব্যক্তির হৃদয়ে দুনিয়ার প্রেমস্থান পাওয়ার সুযোগ নেই। এ কথা শুনেই তিনি বিদায় নেন এবং দীর্ঘদিন আল্লাহর প্রেমে মগ্ন থেকে ১৬০ অথবা ১৬১ হিজরী তথা ৭৮১ খ্রি. ইন্তেকাল করেন।
সুফি সাহিত্যে ইব্রাহিম বলখির অসংখ্য নন্যায়পরায়ণ কাজের বর্ণনা পাওয়া যায় এবং তার নিরহঙ্কার জীবনধারা যা তার পূর্ববর্তী বলখির রাজার জীবনধারার সঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল তারও বর্ণনা রয়েছে। আবু নঈমের বর্ণনা মতে, ইব্রাহিম বলখি সুফি সাধনার ক্ষেত্রে নীরবতা ও ধ্যানের গুরুত্বের উপর জোর প্রদান করতেন। জালাল উদ্দিন রুমি তার বিখ্যাত গ্রন্থ মসনবি শরীফে ইব্রাহিম বলখির কাহিনী ব্যাপকভাবে বর্ণনা করেছেন। ইব্রাহিম বলখির সবচেয়ে বিখ্যাত শিষ্যের নাম হল শাকিক আল বলখি।
হযরত শাহ্ সুলতান ইব্রাহিম ইবনে আদ্হাম বলখী (রাহঃ) (আঃ) এর পবিত্র মাজার শরীফের অবস্থানঃ মহাস্থানগড়, বগুড়া, বাংলাদেশ
প্রচারেঃ হযরত ইসমাইল হোসেন আলকাদেরী পীর সাহেবের ছোট ছেলে মোঃ মেহেদী হাসান // মোবাইল নম্বর- ০১৭৩৪৪৯১৫২৪ (পাবনা)