বন্ধ ঘোষণার পরেই আমাদের, মানে এই বাংলার মানুষজনদের জানা থাকে যে যাঁরা বন্ধ ডেকেছেন তাঁরা রাজ্যের মানুষকে বন্ধ সফল করার জন্য ধন্যবাদ জানাবেন। যাঁদের বিরুদ্ধে ডাকা হয়েছে তাঁরা সেই একই বন্ধ ব্যর্থ করার জন্য ঐ একই মানুষকে ধন্যবাদ জানাবে। প্রায় একই আবহে এই যুদ্ধে দেশবাসীকে সংগে থাকার জন্য, দেশের সৈনিকদের বীরত্বের জন্য, পাক জঙ্গি শিবির তছনছ করে দেবার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী। আর ওদিকে তো জস্ন মনানা শুরু হো গয়া, পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ দেশ জুড়ে উৎসব ঘোষণা করে দিয়েছেন । রবিবার সারা পাকিস্তানে ‘ইয়ুম-ই-তাশাকুর’ মানে ধন্যবাদ জানানোর দিন, থ্যাঙ্কস গিভিং ডে পালন করার ডাক দিয়েছেন। যে সমস্ত যুদ্দধবাজ অ্যামকর আর অ্যাঙ্করনিদের দল যুদ্ধ বিরোধী কথা বললেই, শান্তির কথা বললেই শান্তির ছেলে বলে তেড়ে আসছিলেন, তাঁরা থত্মত খেয়ে কুসুম খুঁজছেন। এখনও হিসেব সম্পূর্ণ নয়, কিন্তু একটা নড়বড়ে হিসেব বলছে জনা ৬০ মানুষজন প্রাণ হারিয়েছেন, এঁদের মধ্যে শিশু মহিলা আছেন। দুদেশের ভাষায় উগ্রপন্থী আছে, সেনাবাহিনীর লোকজন আছে। এবং খেয়াল করুন, কে এই যুদ্ধ বিরতীর কথা জানালেন? না ভারতের প্রধানমন্ত্রী বা পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান নয়, ডোনাড ট্রাম্প। ওনার টুইটেই জগৎবাসী জানতে পারলো যে যুদ্ধবিরতী তে রাজী দুই দেশ। তাহলে কাশ্মীর এবং মুলত কাশ্মীর নিয়েই বিরোধের সমস্যার মধ্যে তৃতীয় দেশ নাক গলালো? তারমানে সিমলা চুক্তিতে যে শর্ত ছিল, কেবল দ্বিপাক্ষিক আলোচনাতেই মেটানো হবে এই সমস্যা তা কি আর মানা হবে না? এসব হাজারো প্রশ্নের মুখে যুদ্ধ বিরতী এলো এবং যে কোনও সুস্থ মানুষের মতই আমিও এই যুদ্ধ বিরতীকে ১০০% সমর্থন করছি। ইতিমধ্যেই লক্ষ কোটি মানুষ হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন, আমিও তাদের মধ্যেই একজন যে প্রথম দিন থেকেই শুধু এই যুদ্ধ নয়, যে কোনও যুদ্ধের বিরোধী। কিন্তু প্রশ্ন তো থাকবেই, দেখুন ২২ এপ্রিল পাহালগাম ম্যাসাকারের পরে যাদের ছবি বেরিয়েছিল ১) তাদের কে কি খুঁজে বার করা গেছে? ২) তাদের যারা পাঠিয়েছিল সেই মাথাদের ধরা গেছে? ৩) কোন ফেলিওর অফ ইন্টলিজেন্স এর ফলে এই কান্ড ঘটেছিল সেটা জানা গেছে?৪) পাকিস্তান কে কি বোঝানো গেছে যে তারা এরকম করলে কী কী হতে পারে? ৫)আন্তর্জাতিক কমিউনিটির কাছে পাকিস্তান কে এই কাজের জন্য দায়ী বলে পাশে আনা গেছে? ৬) একটা টেরর স্টেট পাকিস্তান কে আই এম এফ থেকে প্রায় ২,৩ বিলিয়ন ইউ এস ডলার লোন এর স্যাংশন আটকানো গেছে? ৭) পাকিস্তানের টেরর নেটওয়ার্ক ভেঙে চুরমার করে দেওয়া গেছে? ৮) পাকিস্তান কে তিন টুকরো করে দেওয়া গেছে? ৯) শুভেন্দু অধিকারির দাবী অনুযায়ী পাকিস্তান কে গাজা স্ট্রিপ বানিয়ে দেওয়া গেছে? আবার অন্যধার থেকে দেখুন সেই ৭১ এর পরে পাকিস্তানের মূল ভুখন্ডে আঘাত করার জন্য ভারতের সৈন্যবাহিনীকে পরাস্ত করে কাশ্মীর দখল করেছে পাকিস্তান? ২) ভারতের সামরিক কাঠামো ভেঙে চুরমার করে দিতে পেরেছে পাকিস্তান? ৩) আন্তর্জাতিক কমিউনিটির কাছে ভারতই যে অন্যায় ভাবে আগ বাড়িয়ে আক্রমণ করেছে তা কি প্রতিষ্ঠা করা গেছে? এসবের কোনওটাই হয় নি। উলটে এতদিন যা ছিল দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পরিসরে সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঢুকে এক তৃতীয় পক্ষ হিসেবে শান্তি আনার দাবী জানাতে পারলেন। হ্যাঁ এর আগেও বাজপেয়ী জামানায় কার্গিল যুদ্ধের সময়ে আমেরিকার সঙ্গেই দীর্ঘ আলোচনার ভিত্তিতেই কার্গিল যুদ্ধ শেষ হয়েছিল, এবারে সেই কাজটা করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।