"এইখানে আমাদের লেখকরা স্বাধীন যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমের সুযোগে, যেই বিচিত্র ধরনের ভাষার ব্যবহার করছে, এইটা এই রকমই হওয়ার কথা ছিল । বাংলাদেশে এইটা এই রকমই হওয়ার কথা ছিল । যা হওয়ার কথা ছিল তাই ঘটেছে । কিন্তু এই ব্যবহারকারীদের মধ্যে বেশির ভাগের ক্ষেত্রে আমি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা উপাদানের অভাব দেখতে পাই । সেই উপাদানটা হল, ওরা জানে না বা খেয়াল রাখে না কিনবা তাদের কথায় কিনবা আচরণে এইটা প্রকাশ পায় না যে, লিটারেরি ইউজ হচ্ছে ভাষার খুবই নগণ্য ইউজ, এইটা একটা কলোনিয়াল রোগ । যেহেতু ভদ্রলোক শ্রেণী কলোনীতে প্রধানত সাহিত্য করে, ফলে ও--- ভাবে, ভাষার ব্যবহার বুঝি প্রধানত সাহিত্যে । এই রোগ বঙ্কিমের ছিল । এই রোগ অংশত রবীন্দ্রনাথের ছিল । এই রোগ থেকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মুক্ত ছিলেন । ...
আমি বলছি, সমস্ত লোক কিন্তু মতামত প্রতিষ্ঠায় কিনবা একটা ডিসকোর্স প্রতিষ্ঠায় সমান অংশ নেয় না । যদিও প্রভাব পড়ে । আমি বলছি যারা সাহিত্য করে, মতামত তৈরি করে, এই বিষয়ে মত দেয়, আমি তাদের কথা বলছি । তাদের মতের মধ্যে আমি এইটার কোন প্রভাব দেখতে পাই না যে, ও--- ভাবছে, আমি যে ভাষা সম্পর্কে কাজ করছি, এই ভাষা একটা এজমালি সম্পত্তি । এর সচেয়ে বড় ব্যবহার হয়, যেখানে আমি পোলাপানকে প্রথম শ্রেণীতে একটা বই ধরিয়ে দিচ্ছি এবং সে এই বইয়ের মধ্য দিয়ে ষ্টেইটে (রাষ্ট্রে) প্রবেশ করছে, সেইখানে । তখন সে একটা সেইম লাঙ্গুয়েজে প্রবেশ করছে । এইটা কার্যকারিতার দিক থেকে ভাষার সবচেয়ে বড় ব্যবহার । ভাষার সবচেয়ে বড় ব্যবহার হল অফিস-আদালত এবং আইনে । এইগুলা হল মানুষকে সরাসরি প্রভাবিত করে । এইগুলা মানুষের জীবন-মরণ নিয়া কাজ করে । ভাষার সবচেয়ে বড় ব্যবহার হল আমার দৈনন্দিন কাজ-কর্মে, আমরা যে সামাজিক জীবন-যাপন করি সেই জীবনে । সাহিত্য একটা অত্যন্ত গৌণ ব্যবহার ! অত্যন্ত গৌণ ব্যবহার !
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, লোকে আসলে এইটাও খেয়াল করে না যে, সাহিত্যের ভাষা তো একটা ডায়লেক্ট । লিটারেচারের ভাষা তো একটা স্পেসিফিক আর্টিস্টিক লাঙ্গুয়েজ । পৃথিবীর কোথায়ও, কখনো লিটারেচার বা আর্টের ভাষা--- প্রমিত ভাষা নিয়া সমস্যায় ছিল না । কিন্তু আমরা দেখছি যে, আমাদের এইখানে সমস্ত বিপ্লব ঐখানেই হচ্ছে !..."