খরগোশ কি কি খায় | খরগোশের প্রতিদিনের খাবারের আদর্শ তালিকা | Khorgos Ki Ki Khay What Rabbits eat
খরগোশ এর প্রতিদিনের খাবারের আদর্শ তালিকা |
আমরা শখের বশে অনেকেই খরগোশ কিনে নিয়ে আসি। কিন্তু কিনে আনার পর খরগোশ কি কি পছন্দ করে ও খরগোশ কে কি কি খেতে দিতে হয় এটা আমরা জানি না । যার ফলাফলস্বরূপ খরগোশগুলো অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দূর্বল হয়ে যায়, শুকিয়ে যায়, শরীর থেকে লোম পড়ে যায় এবং সবশেষে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। আপনাদের সুবিধার্থে আজকে আমি খরগোশের একটা আদর্শ খাবার তালিকা আপনাদেরকে দেখাবো যে খাবারগুলো সবসময় খাওয়ালে আপনার খরগোশ সুস্থ থাকবে এবং রোগ বালাই মুক্ত থাকবে ।
১, খরগোশের অন্যতম প্রধান খাবার হচ্ছে ঘাস। একটা খরগোশকে সুস্থ-সবল রাখতে তার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় 70 থেকে 80 পার্সেন্ট পর্যন্ত ঘাস দিতে হবে। সেটা শুকনো ঘাসে হতে পারে আবার কাঁচা ঘাস ও হতে পারে। খরগোশের খাবার হিসেবে সমগ্র পৃথিবীতে ঘাসের ঘর বা হে ব্যবহার করা হয় সে ক্ষেত্রে কাঁচা ঘাস না দিতে পারলেও হে ব্যবহার করতে পারেন । দেখুন এই খরগোসটা কে ঘাস এবং কলমি শাক একসাথে খেতে দেয়া হলো এবং সে কিন্তু প্রথমে ঘাস টাই পছন্দ করে খাচ্ছে। আসলে খরগোশের খাবার হিসেবে ঘাস এর কোন বিকল্প নেই। কিছু রিসার্চে দেখা গেছে খরগোশকে একেবারেই ঘাস না খাইয়ে বিভিন্ন রকমের সবজি লতাপাতা ও শাক খাওয়ানো হলে সেই খরগোশগুলো ২-3 বছরের বেশি বাঁচে না। অন্যদিকে যে খরগোশ গুলোকে সব সময় প্রচুর পরিমাণে ঘাস বা হে খেতে দেয়া হয় সেগুলো 10 থেকে 12 বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
২,খরগোশের জন্য একান্তই যদি আপনার পক্ষে ঘাস সংগ্রহ করা সম্ভব না হয় তবে খরগোশকে কলমি শাক খাওয়াতে পারেন। কারণ কলমি শাক এমন একটা শাক যেটার মধ্যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এটা ছাড়া অন্যান্য কোনো শাকই আপনি খরগোশকে অতিরিক্ত খাওয়াতে পারবেন না। আমাদের মধ্যে যারা শহরের বাসাবাড়িতে খরগোশ পালন করেন তারা কলমি শাক দিয়ে খরগোশ পালন করতে পারেন এবং এটাকে তাদের প্রধান খাবার হিসেবে ধরতে পারেন। আপনি অন্য যে খাবারে খান না কেন খরগোশের মূল খাবার হিসেবে ঘাস অথবা কলমি শাকই ব্যবহার করতে হবে। তবে চেষ্টা করবেন কলমি শাক খাইয়া খরগোশ পালন করলেও মাঝে মাঝে খরগোশকে ঘাস দিতে। তবেই এরা সুস্থ-সবল থাকবে
৩, পানি আমরা জানি প্রত্যেকটা প্রাণীর জীবন ধারণের জন্য পানি একটা অপরিহার্য খাদ্য। অনেকে মনে করেন খরগোশ হয়তো পানি খায় না। কিন্তু তাদের ধারণা পুরোপুরি ভুল দেখুন এই খরগোসটা কিভাবে পানি খাচ্ছে। আপনি যদি খরগোশ পালন তবে অবশ্যই খরগোশকে পানি খাওয়াতে হবে। সেটা বাচ্চা খরগোশ হোক বা বড় খরগোশ হোক। একটা প্রাপ্তবয়স্ক খরগোশ প্রতিদিন 100 থেকে 300ml পরিমাণে পানি খায়। তারমানে একদিনে একটা খরগোশ এক লিটার বোতলের প্রায় চার ভাগের এক ভাগ পরিমাণ পানি গ্রহণ করে। তাই এদেরকে অবশ্যই ভালো পানি যেটা আপনারা নিজেরা খান সেটা খেতে দেবেন।
৪, খরগোশের খাদ্যতালিকায় পরবর্তী খাবারটি হচ্ছে গমের ভুসি। খরগোশের খাবারের মধ্যে 10% গমের ভুসি দিতে হয়। তারমানে আপনি সারাদিনে খরগোশকে যে পরিমাণ খাবার খাচ্ছেন তার দশভাগের একভাগ গমের ভুসি খাওয়াতে হবে। পরিমাপ জানতে চাইলে প্রতিদিন চায়ের কাপের এক কাপ করে গমের ভুসি খরগোশকে খেতে দিন। খাওয়ানোর সময় এটা শুকনো অবস্থায় দিতে পারেন তবে আশপাশে পানি রাখতে হবে কারণ শুকনো বেশি খাওয়ার পর কিন্তু খরগোশ পানি খায়। আর অবশ্যই ভুষির মধ্যে আপনি মোটা ভুষিটা সবসময় কিনে খরগোশকে খাওয়াবেন। খরগোশকে গমের ভুসি খাওয়ালে খরগোশের পেট খারাপ হবার সম্ভাবনা একেবারেই কমে যায় এটা খরগোশের পেটে গ্যাস থাকলে সেটা নষ্ট করে দেয়। আর হজম প্রক্রিয়াতেও গমের ভুসি খুবই সহায়ক।
৫, খরগোশের খাদ্যতালিকায় পরবর্তী উপকরণগুলো হচ্ছে বিভিন্ন শাকসবজি লতাপাতা। আপনি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কলমি শাক ঘাস এবং গমের ভুষির বাইরে 20% পরিমাণে অন্যান্য শাকসবজি দিতে পারেন। খরগোশ যে সমস্ত শাকসবজি খায় এদের মধ্যে রয়েছে মুলা শাক গাজর বেগুন গাছের পাতা লেটুস পাতা কিছু কিছু খরগোশের ক্ষেত্রে আম পাতা হেলেঞ্চা ডাটা শাক সহ প্রায় অধিকাংশ শাকসবজি খরগোশকে খেতে দেয়া যায়। অন্যদিকে আপনি যদি খরগোশকে গাজর খেতে দিতে চান তবে সপ্তাহে 2 পিস এর বেশি গাজর খেতে দেয়া ঠিক হবেনা। এবার আসুন জেনে নেই কোন খাবারগুলো খরগোশের জন্য বিষাক্ত এবং কোন খাবারগুলো খরগোশকে খাওয়ানো যাবে না। খরগোশের জন্য বিষাক্ত খাবারের তালিকায় রয়েছে আলু এবং আলু গাছের পাতা আলু গাছ এবং আলু এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে স্টার্ট থাকে যেটা খরগোশের জন্য ক্ষতিকর। যদিও আলু এবং আলু গাছ খরগোশের জন্য বিষাক্ত না কিন্তু খরগোশ আলুর মধ্যে থাকা এবং আলু গাছের পাতার মধ্যে থাকা অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট তার পেটে হজম করতে পারে না তাই এগুলো যদি খরগোশ খেয়ে ফেলে তখন পেট খারাপ বদহজম গ্যাসের সমস্যা জাতীয় বিভিন্ন সমস্যা হতে দেখা যায় , তাছাড়া রসুন রসুন গাছের পাতা পেঁয়াজ এবং পেঁয়াজ গাছের পাতা আদা গাছের পাতা এগুলোর কোনটাই খরগোশকে খেতে দেয়া যাবে না। কারণ এই সমস্ত রুটিং ভেজিটেবল এর পাতাগুলো খরগোশের রক্তে এক ধরনের বিক্রিয়া সৃষ্টি করে যার ফলশ্রুতিতে খরগোশের রক্তের লোহিত রক্তকণিকা গুলো ভেঙে যায় এবং খরগোশ এসমস্ত খাবারগুলো অতিরিক্ত খেয়ে ফেললে মারা যায়। তাই অবশ্যই অবশ্যই আদা রসুন ও পেঁয়াজ জাতীয় গাছ এগুলোর শিকর বাকর ছাল সবকিছু খরগোশের থেকে 100 হাত দূরে রাখুন। একই সাথে আপনি খরগোশকে আইসবাগ লেটুসের পাপা খেতে দিবেন না। অন্যদিকে বিভিন্ন রকমের পাতাবাহার গাছের পাতাও কিন্তু খরগোশের জন্য বিষাক্ত। তাই আপনার বাসায় যদি এই ধরনের গাছ গুলো থাকে তবে সেগুলো খরগোশ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন।
এ সবগুলো খাবারের পাশাপাশি খরগোশ কিন্তু কিছু কিছু ফল খায়। তবে ফলগুলো আপনি হয়তো এদেরকে সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন একটু একটু খাওয়াতে পারেন।