হাতিয়া, নিঝুম ও মনপুরা দ্বীপ ভ্রমণের অন্যান্য পর্বের লিংক সমূহঃ
ভিডিওটির ১ম পর্বের লিঙ্কঃ
https://youtu.be/LouTJzsw7nU
ভিডিওটির ৩য় পর্বের লিঙ্কঃ
https://youtu.be/8gI6ENMh7Pc
ভিডিওটির ৪র্থ পর্বের লিঙ্কঃ
https://youtu.be/-5OKX5KaLv0
Chapter
00:00 Recap & Intro
01:16 Breakfast
02:25 তমরুদ্দিন লঞ্চ ঘাট ও হামুনের প্রভাব
06:05 নিঝুম দ্বীপের উদ্দেশ্যে ট্রলারে যাত্রা শুরু
07:52 চরচেঙ্গা বাজারে বিরতি
10:15 হামুনের তাণ্ডব
13:38 হোটেল নিঝুম সী প্যালেসে চেক ইন
14:28 দুপুরের খাবার গ্রহণ
16:27 সী-বিচ দর্শন
18:17 সী-বিচে ব্যাচেলরদের আড্ডা ও গানের আসর
24:26 নিঝুম দ্বীপের সমূদ্র দর্শন
25:30 একক সঙ্গিতানুষ্ঠান
26:36 ব্যাচেলর আড্ডা ও রাতের খাবার গ্রহণ
27:31 হরিণ দর্শন
28:51 ব্যাচেলরদের গানের আসর
30:18 আগামী পর্ব
দ্বীপদেশ না হলেও নদীমাতৃক বাংলাদেশের আঙ্গিনার চরগুলো এই অভিজ্ঞতার ষোল আনাই পূরণ করতে পারে। আজকের আয়োজনে থাকছে সেরকম একটি অকৃত্রিম জায়গা নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের নানা দিক। বাংলাদেশের দক্ষিণের বিভাগ চট্টগ্রামের নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত হাতিয়া উপজেলার ছোট একটি দ্বীপ এই নিঝুম দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের বুকে মেঘনা নদীর মোহনায় জেগে ওঠা এই চরটি হাতিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। চর ওসমান, বাউল্লারচর, কামলার চর, ও মৌলভির চর- এই চার চর নিয়ে পুরো নিঝুম দ্বীপ। প্রায় ১৪ হাজার ৫০ একরের এই দ্বীপটি সাগরের মাঝখানে জেগে ওঠে ১৯৪০ সালে। তারও প্রায় এক দশক পড় গড়ে ওঠে জনবসতি। দ্বীপটিকে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল। ২০১৩ সালে হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র একটি ইউনিয়নের মর্যাদা পায় নিঝুম দ্বীপ।
নিঝুম দ্বীপের নামকরণ
জনবসতি গড়ে উঠার একদম শুরুর দিকে এই দ্বীপের নাম ছিল চর ওসমান ও বাউল্লার চর। লোকমুখে শোনা যায়, এখানে বসতি গড়া প্রথম মানুষটির নাম ওসমান। তিনি ছিলেন একজন বাথানিয়া; আর তখন তার নামানুসারেই দ্বীপের নামকরণ করা হয়েছিল। শুধু সৈকতই নয়, দ্বীপের মাটিও বালুতে চিকচিক করতো। দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে দেখা যেতো বালুর ঢিবি বা টিলার মতো জায়গা। আর এই কারণেই বাইল্যার ডেইল বা বাউল্লার চর শব্দগুলো এই দ্বীপের নামের সঙ্গে জুড়ে যায়। এমনকি এখনও নিঝুম দ্বীপের অবস্থান জানার জন্য স্থানীয়দেরকে বাইল্যার ডেইল বা বাউল্লার চরের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে হয়। প্রথম বসতি গড়ের ওঠার সময় চরে প্রচুর চিংড়ি পাওয়া যেতো। চিংড়ির স্থানীয় নাম ইছা; তাই স্থানীয়দের কেউ কেউ একে ইছামতির চরও বলতো। ১৯৭০ এর ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপটি একদম জনমানব শূন্য হয়ে যায়। ঝড় শেষে হাতিয়ার তৎকালীন সংসদ সদস্য আমিরুল ইসলাম কালাম দ্বীপটিতে পরিদর্শনে গিয়ে নাম বদলে দ্বীপের নাম নিঝুম রাখেন।
নিঝুম দ্বীপের দর্শনীয় স্থান
নিঝুম দ্বীপের বিশেষত্ব হচ্ছে চিত্রা হরিণ ও শীতকালের অতিথি পাখি। একসঙ্গে এতো চিত্রা হরিণ দেশের আর কোথাও দেখা যায় না। আর সন্ধ্যা নামলেই শিয়ালের ডাক শিরদাঁড়া দিয়ে রোমাঞ্চের ঢেউ তোলে। পাখি, হরিণ দেখতে হলে খুব ভোরে উঠতে হবে। আগে থেকেই কোনো স্থানীয় গাইডকে বলে রাখা যেতে পারে। তাহলে সঠিক জায়গায় যেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। স্থানীয় ছোট ছোট ছেলেরাই গাইডের কাজ করে। ওরাই সাধারণত পর্যটকদের ম্যানগ্রোভ বনের হরিণ দেখিয়ে নিয়ে আসে। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য এখানকার সেরা জায়গা নামা বাজার সৈকত। নামা বাজার থেকে পায়ে হেটে ১০ মিনিটের মধ্যেই সৈকতে পৌঁছা যায়। বারবিকিউয়ের জন্যও এ জায়গাটি বেশ জনপ্রিয়। নিঝুম দ্বীপ ছাড়া পাখিদের মেলা বসে পাশের দ্বীপ কবিরাজের চর ও দমার চরে। পড়ন্ত বিকেলে কবিরাজের চরের কাছে চৌধুরীর খাল দিয়ে নৌকা করে কিছু দূর গেলেই চোখে পড়বে চিত্রা হরিণ। ট্রলার রিজার্ভ করা হলে মাঝিই হরিণ দেখিয়ে নিয়ে আসতে পারবে। ১০ থেকে ১৫ জনের জন্য ট্রলার ভাড়া পড়তে পারে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। তাজা ইলিশ খাওয়ার জন্য কমলার দ্বীপ সেরা জায়গা। জাতীয় উদ্যান এলাকা থেকে সাগর ঘোরার জন্য ৪০ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ফাইবার বোট ভাড়া দেওয়া হয়। শীতের অতিথি পাখি দেখার জন্য এখানকার আরো একটি দর্শনীয় জায়গা হচ্ছে ভার্জিন আইল্যান্ড। দমার চরের দক্ষিণে নতুন সৈকতটিই ভার্জিন আইল্যান্ড। দমার চর ঘুরে আসতে হলে ট্রলার ভাড়া পড়বে প্রায় তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা। নিঝুম দ্বীপ থেকে একটু দূরের পথে দেখা মিলবে ভোলার ঢালচর আর চর কুকরি-মুকরি।
নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলা ও নামার বাজার সৈকতের কাছেই ভালো মানের কয়েকটি রিসোর্ট আছে। এগুলোতে জনপ্রতি এক হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা খরচে বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম পাওয়া যাবে। শীতের নিঝুম দ্বীপ মানেই ক্যাম্পিং। দ্বীপে ক্যাম্পিংয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো নামার বাজারের নিঝুম রিসোর্টের পাশের খালটি পেরিয়ে সৈকতের কাছে প্রায় ছয় মাইলের বিশাল খোলা মাঠটি। ক্যাম্পিংয়ে রীতিমত স্বয়ংসম্পূর্ণ নিঝুম দ্বীপ। এখানকার জাহাজমারা বাজারে ক্যাম্পিংয়ের প্রায় সব আইটেমই পাওয়া যায়। এ ছাড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায়ও তাঁবু ভাড়া পাওয়া যায়। তাই যাত্রার সময় সঙ্গে করে তেমন কিছুই নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। নিঝুম দ্বীপে পেটপূর্তির জন্য যেতে হবে নামার বাজারে। সেখানকার খাবার হোটেলগুলো সামুদ্রিক মাছ এবং চিংড়ি ভাজার জন্য বেশ জনপ্রিয়।
শেষ কথা
নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণে সতর্ক থাকা আবশ্যক, বিশেষ করে যাত্রা শুরুর আগে অবশ্যই সেখানকার আবহাওয়ার ব্যাপারে অবগত হয়ে নেওয়া উচিত। নিঝুম দ্বীপে বিদ্যুতের জন্য সবাই জেনারেটর ও সোলারের ওপর নির্ভরশীল। তাই যাত্রার মুহূর্তে ব্যাগ গোছানোর সময় শীতের পরিমিত কাপড় ও ফার্স্ট এইডের পাশাপাশি মোবাইল চার্জার, ক্যামেরার ও মোবাইলের জন্য অতিরিক্ত ব্যাটারি, পাওয়ার ব্যাংক ও টর্চের কথা ভুলে গেলে চলবে না। বিভিন্ন যানবাহন ভাড়া করার সময় আগে থেকে ভালোভাবে মিটিয়ে নেওয়া উচিত। তবে দর কষাকষির সময় শিষ্টতা বজায় রাখতে হবে। সর্বোপরি, নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের সময় দ্বীপের পরিবেশ যেন অপরিষ্কার না হয় সেদিকে স্পষ্ট খেয়াল রাখতে হবে।