গ্রামের বাড়িতে বিকেলে চা খাচ্ছি, গ্রামের কিছু লোকজনের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছি। তাঁদের একজন বললেন, দেখেছেন তো মোদিজীকে আমেরিকা, চীন, জার্মানি, ফ্রান্স সমেত ২০ টা বড় বড় দেশ তাঁদের নেতা বলে মেনে নিয়েছেন। আমার তো বিষম খাবার জোগাড়, কোথায়? কেন? কীভাবে। তিনি জানালেন বিশ্বের ২০ টা দেশের প্রতিনিধিরা দিল্লিতে এসে মোদিজীকেই সমস্ত সিদ্ধান্ত নেবার দায়িত্ব দিয়েছেন, আপনারা মোদি বিরোধীরা এটাকেও অস্বীকার করছেন। আসলে তিনি জি টোয়েন্টি বৈঠকের কথা বলছিলেন। হ্যাঁ বিশ্বের এক ফোরাম যেখানে প্রতিবছর সেই ২০ টা দেশের একজনকে জি টোয়েন্টির চেয়ারম্যান করা হয়, সেই ২০ টা দেশের মাথা পিছু রোজগারে ভারত সব থেকে নীচে, মাথা পিছু সম্পদে সব থেকে নীচে, হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইন্ডেক্স এ সবথেকে নীচে থাকা দেশ। কিন্তু মোদিজী, তাঁর সরকার, আর এস এস – বিজেপি সারা দেশে এমন একটা প্রচার চালিয়েছিল যাতে মনে হয় তিনিই আপাতত ২০ টা দেশের মাথায় বসে থাকা এক বিশ্বগুরু। জি টোয়েন্টি মানে আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইটালি, জাপান, মেক্সিকো, রাশিয়া, সৌদি আরব, সাউথ আফ্রিকা, সাউথ কোরিয়া, তুর্কি, ইউনাইটেড কিংডম এবং আমেরিকা আর ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এই ২০ টা দেশ, অঞ্চল এর এক সংগঠন, ২১ সাল জুড়ে এই জোটের চেয়ারপার্সন ছিলেন ইতালির রাষ্ট্রপ্রধান, ২২ সাল জুড়ে ইন্দোনেশিয়া, ২৩ সালে ভারতের নরেন্দ্র মোদী, ২৩ সালের ৯-১০ সেপ্টেম্বার দিল্লিতে সম্মেলন বসে, এরপরে সম্মেলনের দায়িত্ব পায় ব্রাজিল। এরকম প্রত্যেক বছরে এই দেশগুলোর এক দেশে সম্মেলন হয়। যে দেশ জি টোয়েন্টির চেরা পার্সন হয় সেই দেশ সম্মেলনের দায়িত্ব পায় কিন্তু ২০২৩ এ দেশ জুড়ে প্রচার নরেন্দ্র মোদিকে রাশিয়া, জার্মানি, চীন আমেরিকা ইউনাইটেড কিংডমও নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছে। চারিদিকে, হাটে বাজারে এই প্রচার চলছে, ন্যাশনাল টিভিতে বিশ্বগুরু, টিভির পর্দায় মোদিজী, সারা পৃথিবী তাকিয়ে দেখছে বিশ্বে ভারতের নব উথ্বান, এর আগে নাকি পৃথিবী ভারতকে চিনতোও না, স্বয়ং নরেন্দ্র মোদী এই কথা জানিয়ে দিলেন, আর হোয়াট অ্যাপ ইউনিভার্সিটিতে তো অন্য কোনও আলোচনার কোনও স্পেশ ছিল না। এবং জানিয়ে রাখি এর পেছনেও মোদিজীর একটা ক্যালকুলেশন কাজ করেছিল, ২০২১ এ এই সম্মেলনের ভার ছিল ইটালি নয় ভারতের ওপরে, তো নরেন্দ্র মোদী জানান যে ২০২২ আমাদের স্বাধীনতার ৭৫ বছর, কাজেই আমাদের ২০২২ দেওয়া হোক। ইন ফ্যাক্ট ৭৫ বছরের অনুষ্ঠানের শেষে ডিসেম্বারে তিনি জি টয়েন্টির হোস্ট হলেন, যার পরিসমাপ্তি হল সেপ্টেম্বার ২০২৩, এবং মাথায় রাখুন ২০২৪ হল ইলেকশন ইয়ার। সেপ্টেম্বারে বাইডেন থেকে সুনাক হেঁ হেঁ, জাপটে ধরছেন যাকে তাকে, ২০২৪ এ বিশ্বগুরু নির্বাচনে নামবেন এটা জেনেই। তো সেই বিশ্বগুরুর দেশের মানুষজনদের অনায়াসে হাতে হাতকড়া পরিয়ে, মাথার পাগড়ি খুলিয়ে, টয়লেট পর্যন্ত ব্যবহার না করতে দিয়ে, পানীয় জল না দিয়ে যুদ্ধ বিমানে করে ফেরত পাঠানো হয়েছে ভারতীয় নাগরিকদের যাঁরা নাকি অবৈধভাবে আমেরিকাতে ঢুকেছিল, ওদিকে একরত্তি দেশ কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রথমে প্লেন ফেরত পাঠালেন, তারপর নিজেদের বিমান পাঠিয়ে আনালেন তাঁর দেশবাসীদের। বিশ্বগুরু তখন ইলন মাস্কের ছেলেকে চই চই চই চই বলে আদর করছেন, বাইডেনকে সাথ মেরা পুরানা দোস্তি হ্যায়, জি টোয়েন্টির সময় বলেছিলেন, সম্ভবত ডোনাল্ড ট্রাম্প সাহেব সেটা খেয়ালও করেছিলেন, তাই পাশে দাঁড়িয়েই ভারতের রাষ্ট্র প্রধানকে জানিয়ে দিলেন আপনাদের দেশের সঙ্গে বাণিজ্য করা অসম্ভব। সেই মোদিজী এখন আরও একলা। উগ্রপন্থীরা দেশের মধ্যে ঢুকে দেশের ২৭ জনের প্রাণ নিল, আমেরিকা, রাশিয়া, ইউরোপ, অমন সাধের ইতালি, জার্মানি, একজনও সোজা ভাষায় পাকিস্তানের সমালোচনা করেছে, একজনও না, হ্যাঁ জ্ঞান দিয়েছে, দুদেশের মধ্যে আলোচনা করে এক সমাধানে আসা সম্ভব ইত্যাদি ইত্যাদি। এদিকে বিশ্বগুরুর ওপরে চাপ বাড়ছে, ওদিকে বাস্তব অবস্থারও চাপ আছে। এমনকি বাংলাদেশও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পিছপা নয়। আর হবেই বা কেন? বন্ধু আদানিকে নিয়ে গিয়ে যে ঘোটালা পাকিয়েছেন তা সামাল দিতে আশ্রয় দিতে হয়েছে শেখ হাসিনা কে, না পারছেন গিলতে না পারছেন ওগরাতে।