"বিয়ের আসরে ১৭ বছরের তুলি তার বরের পা দুটো চেপে ধরলো! সবাই অবাক তার এই কাণ্ডে কিন্তু ঠিক কি করণে....
আকাশে তারার মেলা♥️
ভরা বিয়ের আসরে নিজের হবু বরের পা দুটো চেপে ধরল তুলি। ফ্যালফ্যাল নয়নে তাকিয়ে রইল বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত থাকা প্রত্যেক টা ব্যক্তি। এই প্রথম হয়ত দেখছে নিজের বিয়ের আসরে কোনো কনে নিজের হবু বরের পা জরিয়ে ধরে এভাবে কান্নায় ভেঙে পড়তে।পানিতে টুইটুম্বুর চোখ নিয়ে আহাদের দিকে মুখ তুলে চাইল তুলি। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে আহাদ। তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে তার প্রেমিকা । হাতের মুঠোয় হাত রেখে দাড়িয়ে আছে দু'জন স্বাভাবিক ভঙিমা বজায় রেখে। অপরদিকে লাল বেনারসি পড়ে বধূবেশে থাকা তুলি আহাদের পা চেপে ধরে বসে আছে মেঝেতে। অথচ আহাদ তুলির দিকে একবারও মুখ ফিরিয়ে তাকাচ্ছে না। তুলির মামা-মামী ও নিস্তব্ধত হয়ে আছেন। নিজের ছেলের এমন কান্ড দেখে তুলির খালা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন চেয়ারে। আহাদের মুখ পানে অশ্রুসিক্ত নয়নে চেয়ে থেকে কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠল তুলি,,
----আজ তো আমাদের বিয়ে ছিল আহাদ ভাই। দেখো না লাল বেনারসি পড়ে বধূবেশী এই আমি তোমার পায়ে হাত চেপে রেখেছি । অপেক্ষায় ছিলাম তোমার বধূবেশী সাজে। কিন্তু! কিন্তু আমার বদলে অন্য কারো হাত ধরে রেখেছ তুমি। ছোট থেকে আগলে রেখে কেন দিলে এমন পরিণাম? বিয়ে করে নাও আমাকে আহাদ ভাই।
তুলির অশ্রুসিক্ত কন্ঠের আকুতি আহাদের মস্তিষ্কে ছ্যাঁত করে উঠল। নিজের দু চোখ বুঁজে আবারও মেলে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল তুলির মায়াবী মুখ খানাতে। নিষ্পাপ তুলি। শ্যামবতী কন্যা। অথচ অজস্র মায়ায় ভরপুর তার চেহারা। ডাগরডাগর চোখে চিকচিক করছে জল। সতেরো বছরের মেয়েটা কে লাল টুকটুকে বেনারসি তে হুট করেই সাতাশ বছরের রূপবতী মনে হচ্ছে আহাদের কাছে। নিজের ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নিল সে। শুকিয়ে গেল গলা। পাশে দাঁড়ানো ঝুমুর হাত টা আঁকড়ে ধরল আরো শক্ত করে। কঠিন গলায় বলে উঠল,,,
---আমি ঝুমু কে ভালোবাসি তুলি। তোকে আমি কখনোই ভালোবাসি নি। আমি জানতাম না খালামণি আমাদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলেন আগে থেকেই। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোকে নীতির মতো করে ছোট বোন ভেবে আগলে রেখেছি সর্বদা। মা যে হুট করে বিয়ের আয়োজন করে ফেলবে বুঝতে পারি নি আমি । তুই আমায় ক্ষমা করে দে তুলি।
আহাদের পা দুটো ছেড়ে বহু কষ্টে উঠে দাঁড়াল তুলি। ভারী বেনারসি টা ছোট্ট তুলির জন্য বহন করা খুব একটা সোজা নয়। আহাদ ও ঝুমুর এর দিকে এক পলক চাইল সে। আহাদের কাছাকাছি দাড়িয়ে কঠিন স্বরে বলে উঠল,,,
--অন্য কাউকে ভালোবাসলে কেন আমায় বিয়ের আসর পর্যন্ত আনলে? কেন আমার ছোট্ট মনটা তে তোমরা সবাই মিলে আঘাত হানলে? আমি তো বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আহাদ ভাই। তোমরা সবাই মিলেই তো আমাকে,,,
কথাগুলো বলতে বলতে মামা -মামীর দিকে চোখ বুলাল তুলি। চিতকার করে বলল,,,
--শান্তি হয়েছে তোমাদের? হয়েছে শান্তি? আমায় বিয়ে দেওয়ার জন্য তো উঠে পড়ে লেগেছিলে। দাও এবার। বিয়ে দাও আমাকে। সহ্য করতে পারছিলে না তো আমাকে? বিদায় করো এখন। যার সাথে পারবে তার সাথেই বিদায় করে দাও।
কানাঘুঁষা শুরু হয়ে গেল পুরো বিয়ে বাড়িতে । ভারী শাড়ি টা আগলে নিয়ে পা বাড়াতেই ফ্লোরে ঢলে পড়ল তুলি । আঁতকে উঠল আহাদ। এগিয়ে আসতে নিলে বাঁধা প্রদান করলেন তুলির মামা। ওনি নিজেই কোলে করে রুমে নিয়ে গেলেন তুলি কে । সাথে সাথেই মুখ বাঁকাল তুলির মামী। ননদের দিকে তাকিয়ে বললেন,,
--ছেলের কুকীর্তি দেখেছ হিমা? কেমন ঠকাল মেয়েটা কে?
অসহায় চোখে আহাদের দিকে তাকালেন হিমা বেগম। কঠোর স্বরে বলে উঠলেন,,,
----আমার ছেলে কুকীর্তি করেছে, নাকি আপনি ও ভাইয়া উঠে পড়ে লেগেছিলেন তুলি কে বিদায় করতে? তুলি তো বোঝা হয়ে গিয়েছিল আপনাদের উপর। আমি কতো করে বলেছি একবার ছেলেমেয়েদের মতামত জেনে নিই কিন্তু আপনি ও ভাইয়া মিলে আমায় জোর করলেন বিয়েটার জন্য। দেখলেন তো পরিণতি???
আসমা বেগম মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলেন। তুলির মামা এসে হতাশার নিশ্বাস ফেলে হিমা বেগমের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,,
-- আহাদ ও মেয়েটার বিয়ের ব্যবস্থা কর হিমা।
সাথে সাথেই বিচলিত কন্ঠে প্রশ্ন করল আহাদ,,
--তুলি ঠিক আছে মামা?
---ওর এ অবস্থার জন্য তুমি ও আমরা সবাই দায়ী। তাই এ প্রশ্ন টা করা মানায় না তোমার।
দমে গেল আহাদ।বিয়ে বাড়ির সবাই চলে গেলেন একে একে। তুলির মায়ের চাচাতো বোন ও ওনার হাসবেন্ড এসেছিলেন ওনারা ও চুপ করে বসে আছেন ড্রইং রুমে। তুলি সতেরো বছরের এক কিশোরী কন্যা। বাবা-মা কে হারিয়েছে প্রায় বছর খানেক গড়াবে। মামার সাথে বাবার বিজনেস ছিল। সেখানে তুলির কিছু প্রাপ্য আছে সেই সুবাদে মামার বাড়িতেই তার বসবাস। চাচা আছেন একজন কিন্তু বারো বছরের তুলি কে পালন করতে রাজি ছিলেন না তারা। শেষমেশ মামার বাড়িতেই ঠাঁই হল তার। কিন্তু মামীর চক্ষু বিষ ডাগরআঁখির অধিকারীণি তুলি।