বরিশাল নদীবন্দর বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের বরিশাল জেলায় অবস্থিত দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ একটি নদীবন্দর। এটি বরিশাল শহরের কীর্তনখোলা নদীর তীরে বন্দরটি অবস্থিত।[২][৩][৪][৫] যাত্রী চলাচলের দিক থেকে এটি ঢাকার পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং ব্যস্ততম নদীবন্দর। বন্দরটি থেকে ঢাকা ও বরিশালের পাশাপাশি চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, ভোলা, লক্ষ্মীপুর, পিরোজপুর এবং বরগুনাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ জেলার মধ্যে প্রতিদিন লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযান চলাচল করে।
বরিশাল বন্দরটি নৌপথে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে সংযুক্ত করে পরিবহণ ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটিকে মংলা, চট্টগ্রাম, খুলনা, ঢাকা ও বাংলাদেশের অন্যান্য নদী বন্দরসমূহের পাশাপাশি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরার মধ্যকার
একটি ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মোগল আমলে বরিশাল নদী বন্দরের অস্তিত্ব ছিল বলে বেকর্ড পাওয়া যায়। তখন এটি "গিরি-ই-বন্দর" নামে পরিচিত ছিল, সেই সময় এই নদী বন্দরের মাধ্যমে লবণ, মশলা এবং কাঠের ব্যবসা হত। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৬৯ সালে নগর কমিটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এবং ১৮৭৬ সালে পৌর মর্যাদা অর্জনের পর, এটিকে বরিশাল বন্দরে রূপান্তরিত করা হয়।
১৮৮০-এর অল্প আগেই বরিশালে নদীপথে স্টিমার চলাচল শুরু হয়। ১৮৮৪ সালে বেঙ্গল সেন্ট্রাল ফ্লোটিলা কোম্পানি বরিশাল ও খুলনার মধ্যে নিয়মিত স্টিমার পরিষেবা চালু করে। পরবর্তীকালে, বরিশাল নদীবন্দরটি থেকে আন্তঃজেলা এবং অন্যান্য জেলা থেকে কলকাতা পর্যন্ত স্টিমার চলাচল শুরু হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও মাদারিপুর শাখা লাইনের নৌযান এখানে যাত্রা বিরতি দিত। জেলার অভ্যন্তরেও বেশ কয়েকটি ফিডার ষেবা বিদ্যমান ছিল। পরবর্তীকালে ভারতের জেনারেল নেভিগেশন, রিভার স্টিম নেভিগেশন, ভারতীয় জেনারেল রিভার স্টিমার সংস্থাগুলির আঞ্চলিক সদর দফতর এখানে গড়ে উঠে।
১৯৪৭ সালে বঙ্গভঙ্গের পর, পাকিস্তান রিভার স্টিমার সার্ভিসেস (পিআরএস) গঠন করা হয় এবং ১৯৫৮ সালে বন্দরটি পূর্ব পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরিত হয়। পূর্ব পাকিস্তান অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন অধ্যাদেশের আওতায় গঠিত 'ইপিআইডব্লিউটিএ ১৯৬০ সালে বরিশাল নদীবন্দরকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, ইপিআইডব্লিউটিএ-এর নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লুটিএ), যা বর্তমানে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ও অভ্যন্তরীণ নৌপথের সমস্ত সম্পর্কিত উন্নয়ন, রক্ষণাবেক্ষণ, এবং পরিচালন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে