মৌমাছির প্রজাতি ও তাদের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হয়েছে।
মৌমাছির প্রজাতিঃ
বর্তমানে পৃথিবীতে প্রধানত ৫ প্রজাতির মৌমাছি দেখা যায়। যেমনঃ (১) এপিস মেলিফেরা, (২) এপিস সেরেনা, (৩) এপিস ডরসাটা, (৪) এপিস ফ্লোরিয়া এবং (৫) এপিস ট্রাইগোনা।
এপিস মেলিফেরা : ইউরোপীয় জাতের এ মৌমাছি শান্ত ধরণের হয়। রানী মৌমাছির ডিম দেওয়ার ক্ষমতা দৈনিক ১০০০-৩০০০ টি । যার ফলে কলোনিতে শ্রমিক মৌমাছি বেড়ে যায় এবং মধু উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে। উৎপাদনক্ষম প্রতিটি মৌ-কলোনি থাকে বছরে গড় মধু উৎপাদন ক্ষমতা ৫০ কেজি। এদের দৈহিক আকার বড় হওয়ায় বেশি পরিমাণে নেকটার ও পোলেন সংগ্রহ করতে পারে। ১৯৯৫ সাল থাকে বাংলাদেশে এই প্রজাতির চাষ শুরু হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে মৌচাষের জন্য এই প্রজাতি সবচেয়ে উপযোগী।
এপিস সেরেনা : এই প্রজাতির মৌমাছির উৎপত্তিস্থল এশিয়া মহাদেশে। এদেরকে ভারতীয় মৌমাছিও বলা হয়। এই প্রজাতি তুলনামূলক শান্ত ও সহিষ্ণু স্বভাবের। রানী মৌমাছির ডিম দেওয়ার ক্ষমতা দৈনিক ২০০-৮০০ টি । যার ফলে কলোনিতে শ্রমিক মৌমাছি কম হয় এবং মধু উৎপাদন কমে যায়। উৎপাদনক্ষম প্রতিটি মৌ-কলোনি থাকে বছরে গড় মধু উৎপাদন ক্ষমতা ১০ কেজি। এদের দৈহিক আকার ছোট হওয়ায় বেশি পরিমাণে নেকটার ও পোলেন সংগ্রহ করতে পারে না। ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে শুধু এপিস সেরেনা প্রজাতির চাষ করা হতো।
এপিস ডরসাটা : এই প্রজাতির মৌমাছির উৎপত্তিস্থল এশিয়া মহাদেশে। এই মৌমাছিকে অঞ্চলভেদে পাহাড়িয়া রাক্ষুসে, মধুমাছি, মধুবল্লা, আড়াইল্যা, দৈত্য মৌমাছি ইত্যাদি বলা হয়ে থাকে। এরা খোলা আলোবাতাস পূর্ণ গাছের ডাল, ঘরের কার্নিসে ঝুলন্ত একটি মাত্র চাক তৈরি করে। এরা হিংস্র স্বভাবের এবং গায়ের রং কালো ধরণের হয়। এরা ঘন ঘন জায়গা পরিবর্তন করে। হিংস্র বলে এই মৌমাছিকে এখনও বাক্সে পোষ মানানো সম্ভব হয়নি। গড়ে প্রতি বছর ৩০ কেজি মধু উৎপাদন হয়।
এপিস ফ্লোরিয়া : এরা আকারে ছোট, সোনালি রঙের এবং শান্ত প্রকৃতির। এর আদিবাস এশিয়া অঞ্চলে। এই প্রজাতির মৌমাছিকে ক্ষুদে মৌমাছি বলা হয়ে থাকে। এরা ঝোপ-ঝাড়ে ছোট ঝুলন্ত চাক তৈরি করে। এরা বাসা বাধার জন্য অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানই পছন্দ করে। এদের একটি কলোনি থাকে বছরে ৩০০-৫০০ গ্রাম মধু পাওয়া যায়।
এপিস ট্রাইগোনাঃ এই প্রজাতির মৌমাছিকে পিঁপীলিকা মৌমাছি বলা হয়ে থাকে। এরা আকারে সবচেয়ে ছোট, গায়ের রং কালো এবং হুলবিহীন। এরা গাছের ছোট ছোট গর্তে বাসা বাঁধে। এদের মধু উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম। একটি কলোনি থেকে বছরে ১০০-২০০ গ্রাম মধু পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে এই প্রজাতির মৌমাছি দেখা যায়।
এই ৫ প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে এপিস মেলিফেরা এবং এপিস সেরেনা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে উৎপাদিত মধুর ৯০% আসে এপিস মেলিফেরা প্রজাতির মৌ খামার থেকে।
#মৌমাছি_চাষ_পদ্ধতি #মৌমাছি