শ্রীকৃষ্ণ-দ্বৈপায়নের অন্য নাম ব্যাসদেব। তাঁর পিতা পরাশর ও মাতা সত্যবতী। পরাশর একদিন সত্যবতীর নৌকায় উঠে তাঁর সঙ্গম প্রার্থনা করেন। শর্তসাপেক্ষে সম্মত হয়ে সত্যবতী কুমারী অবস্থায় যে সন্তানের জন্ম দেন তিনিই বেদব্যাস। ব্যাসদেবের পিতামহ শক্ত্রি ও পিতামহী অদৃশ্যন্তী। পুত্র পরাশরের জন্মের পূর্বে শক্ত্রিকে রাক্ষসে ভক্ষণ করে ফেলে। পরাশর-পিতা শক্ত্রি হলেন বশিষ্ঠ ও অরুন্ধতীর পুত্র। পরাশর পিতামহ বশিষ্ঠের কাছে শিক্ষালাভ করেন। ব্যাসদেবের জন্ম হওয়ার পরে তিনি পিতা পরাশরের সঙ্গে বনে চলে যান। মা পুত্রকে স্মরণ করলে তিনি মায়ের কাছে চলে আসবেন, এমন কথা দিয়েছিলেন ব্যাসদেব। মাতা সত্যবতীর সঙ্গে পরে হস্তিনার রাজা শান্তনুর বিবাহ হয়। গাত্রবর্ণ কৃষ্ণ ছিল বলে ব্যাসকে শ্রীকৃষ্ণ বলা হয়, দ্বীপে জন্মেছিলেন তাই তিনি দ্বৈপায়ন। তাঁর চোখ ছিল ভীষণ উজ্জ্বল, দাড়ি পিঙ্গল বর্ণের এবং জটা কপিল বর্ণের। ব্যাসদেব সপ্ত চিরজীবীর অন্যতম। কেউ কেউ তাঁকে ভগবান বিষ্ণুর অতিরিক্ত অংশ বলে মানেন। পুরাণে ব্যাসদেব শ্রীকৃষ্ণের অংশ বলে প্রসিদ্ধ। এমন কথাও পাওয়া যায়, ব্রহ্মাই ব্যাসরূপে অবতীর্ণ হয়ে ধর্মরক্ষা করেন।
শ্রীকৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন ব্যাসদেব শুধু মহাভারতের রচয়িতানন, তিনি ব্রহ্মসূত্রও রচনা করেন। ব্রহ্মসূত্র হল প্রস্থানত্রয়ীর ন্যায়-প্রস্থান। উপনিষদ স্মৃতিপ্রস্থান ও ভগবদ্গীতা স্মৃতিপ্রস্থান। বেদ বিভাজন করেছিলেন বলে তাঁকে বেদব্যাস বলা হয়। তাঁর তপস্যার জায়গার নাম বদরিকাশ্রম, তাই তাঁকে বাদরায়ণ বলা হয়। অষ্টাদশ মহাপুরাণ ও উপপুরাণ, বেদান্ত দর্শন ও ভাগবত রচনা করেন তিনি। ব্যাস-সংহিতা তাঁর রচিত স্মৃতিশাস্ত্র। পাতঞ্জল দর্শনের ভাষ্য রচনা করেছিলেন এই মুনি।
ব্যাসদেব পিতার সঙ্গে চলে যাওয়ার পর অনেক দিন কেটে গিয়েছে। মাতা সত্যবতী হস্তিনার রাজা শান্তনুর বধূ হয়েছে। জন্ম দিয়েছেন দুই পুত্র, সেই পুত্ররাও মারা গিয়েছেন। মাতা শান্তনুজায়া সত্যবতী তখন হস্তিনার সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লেন। শান্তনু-গঙ্গার পুত্র ভীষ্ম ব্রহ্মচারী। তখন সত্যবতী মৃত পুত্র বিচিত্রবীর্যের দুই বিধবা পত্নীর গর্ভ উৎপাদনের জন্য ব্যাসদেবকে স্মরণ করলেন। ব্যাসদেব এসে জানালেন, ভ্রাতৃবধূদের মন প্রস্তুত করার জন্য সময় দিন কেননা তাঁরা ব্যাসদেবকে সহ্য করতে পারবেন না। সত্যবতী সেই সময় ব্যাসকে দিলেন না। মায়ের আদেশে এবং নিয়োগ অনুসারে তিনি বিচিত্রবীর্যের বিধবা দুই পত্নীর গর্ভে ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডুকে এবং বিচিত্রবীর্যের এক দাসীর গর্ভে বিদুরকে উৎপন্ন করেন। ব্যাসদেবের চেহারা দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলেন বলে অম্বিকা অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রকে প্রসব করেন, অম্বালিকা ভয়ে পাণ্ডু বর্ণ ধারণ করেছিলেন বলে তাঁর পুত্র পাণ্ডুত্বপ্রাপ্ত হয়। শূদ্রা দাসী প্রসন্ন মনে ব্যাসদেবকে গ্রহণ করায় খুঁতহীন বিদুরের জন্ম হয়। এছাড়া ব্যাসদেবের পুত্র হলেন শুকদেব। অরণি মন্থন করে তাঁর জন্ম। তবে শুকের জন্ম নিয়ে অন্য আখ্যানও আছে। একবার এক অপ্সরাকে দেখে বেদব্যাসের শুক্র ক্ষরিত হয়। অপ্সরা তাই দেখে ভয়ে শুকপক্ষীর বেশ ধরে উড়ে পালায়। ওই স্খলিত শুক্র থেকে শুকদেবের জন্ম। কেউ কেউ বলেন, ব্যাসদেব পিঙ্গলার গর্ভে শুকদেবের জন্ম দেন। তবে সেই কথার জোরালো পৌরাণিক প্রমাণ নেই। ব্যাসদেবের শিষ্যরা হলেন সুমন্ত্র, বৈশম্পায়ন, জৈমিনি ও পৈল। এই সব শিষ্যকে তিনি মহাভারতের পাঠ দিয়েছিলেন। তবে মহাভারত রচনা বিষয়ে অন্য কাহিনি পাওয়া যায়।
বদরিকাশ্রমের কুটিরে একদিন বসে আছেন চিরজীবী ব্যাসদেব। এমন সময় সেখানে হাজির হলেন ব্যাসের ঠাকুর্দার ঠাকুর্দা ব্রহ্মা। বেদব্যাস তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার আগমনের হেতু কী? ব্রহ্মা বললেন, তুমি মহাভারতের যুদ্ধের সাক্ষী। যুযুধান দুই পক্ষই তোমার নাতিপুতি। তুমি তাঁদের অক্ষরে অক্ষরে চিনতে। আমি চাই, সেই সব কাহিনি লিপিবদ্ধ হোক।
#biography
#viralvideo
#mahabharat
#bangla
#information
#history
#heritage
#DvaipayanaVedavyasa
#information