#প্রিয়তম ❤️হৃদয় ছোঁয়া একটি গল্প❤️১ম অংশ #গল্প#Heart Touching story #Bangla short story
#ইসরাত জাহান ফারিয়া
অংক স্যারের সাথে রিতুর বিয়ে। বাবার মুখে কথাটা শুনেই রিতু চোখ বড়বড় করে তাকালো। বাবুল মিয়া তার বড় মেয়ে ইশিতাকে বললেন, --বুঝলি রে, খুব করে ধরছে স্যারের মাটা। রিতুরে
নাকি তার খুব পছন্দ হইছে। তাছাড়া ভালো পরিবার, সহায়-সম্পদ আছে। আমি কি করে না করি? তাই কথা দিয়া আসলাম স্যারের মারে।
রিতু চোখে সব অন্ধকার দেখলো। টাল সামলাতে ব্যর্থ হয়ে বেহুঁশ হয়ে পড়ে যেতে লাগলে ওর বড় বোন ইশিতা এসে ওকে ধরলো। উৎকন্ঠিত হয়ে বলল,--বাবা পরে কথা বলো। আগে পানি আনো। রিতুর চোখেমুখে পানির ছিঁটা দিতে হবে। বাবুল মিয়া রান্নাঘর থেকে পানি এনে রিতুর মুখে ছিঁটা দিতে দিতে ভীতু কন্ঠে ডাকলেন,
--রিতু? আম্মা উঠ! কি হইলো তোর? ও মা...
চোখেমুখে পানির ছিঁটা পেতেই রিতু ওঠে বসলো।
বাবার দিকে তাকিয়ে বলল,
--আমি বিয়ে করবো না বাবা।
বাবুল মিয়া ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
--এইসব কইলে কি চলে মা? মাইয়া মানুষের বিয়া করতেই হয়।
--আমি করবো না। তোমার সাথেই থাকবো।
--আমি বাপ হইয়া ঠিকঠাক তোগো ভালোমন্দ কিছু দিতে পারি না। কিন্তু ওইহানে তুই সব পাবি, সুখী হবি!
--তাই বলে তুমি আমার বিয়ে ঠিক করবে অংক
স্যারের সাথে?
--তাতে কি হইছে রে মা?
রিতু কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল,
--আমি অংকে ফেল করেছিলাম বাবা। তুমি ভুলে গেছ?
ইশিতা দাঁত বের করে হাসলো,
--ফেল করছিস তো কি হইছে? এইসব কোনো ব্যাপার না। আমিও তো ইংরেজিতে ফেল মারতাম। তাই বলে কি আমার বিয়ে করিনাই?
--আমার লাজলজ্জা আছে। আমি পারবো না। ম'রে গেলেও না।
বাবুল মিয়া জিভে কামড় দিলেন। আরে! বিষয়টা একদমই তার মাথায় ছিলো না। রিতু বরাবরই অংকে কাঁচা।
গত পরীক্ষায়ও হায়ার ম্যাথে ফেল করেছে ত্রিশ পেয়ে। সেসময় কলেজ থেকে গার্ডিয়ান কল পেয়ে বাবুল মিয়া প্যারেন্টস মিটিংয়ে গিয়েছিলেন।
সেখানেই দেখা হয়েছিলো রিতুর কলেজের ম্যাথের গেস্ট টিচার ইফাদ আনিসুরের সাথে।
কমবয়েসী ছেলে। চোখা নাক, সুন্দর চোয়াল। লম্বা, ফর্সায়, সৌন্দর্যে সবকিছুতে দশে দশ।
এমন সুদর্শন ছেলে তিনি খুব কমই দেখেছেন। বাবুল মিয়া এবার ছলছল ভেজা চোখে মেয়ের দিকে তাকালেন। অপরাধী সুরে বললেন,
--বিয়াতে রাজি এই মর্মে আমি কথা দিয়া ফালাইছি।
রিতু থমকে গেলো। একমুহূর্ত পরেই আর্ত সুরে চেঁচালো,
--স্যার রাজি হলো কীভাবে? ছিহ! আমি তার স্টুডেন্ট...
বাবুল মিয়া ওঠে চলে যেতে যেতে বললেন,
--হেইডা বেয়াইন সাহেবা দেখব...
বাহ! এর মধ্যেই বেয়াইন সাহেবা? রিতুর চোখ ভিজে কান্না এলো। অংক স্যার যে এ বিষয়ে কিছুই জানে না সেটাও বুঝলো।
স্যার জানলে নিশ্চয়ই এ সম্বন্ধে রাজি হবে না রিতুর বিশ্বাস। অতবড় মানুষটা ওর মতো গরিব ঘরের ফেল্টুসকে বিয়ে করতে বয়েই গেছে। হুহ্! এটুকুই ভরসা রিতুর।
বাবা যে রিতুর কথা শুনবেন তা না, নিজের মর্জি মতোই চলবেন রিতু বেশ জানে। মা মরা দুই মেয়ে নিয়ে বাবুল মিয়ার টানাপোড়েনের সংসার।
পানের ব্যবসা করে যে ক টাকা পান তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।